কালের ডাক

Main Section Content Ticker Breaking Content Section Post Title

প্রফেসর ইউনূস এখন কী করবেন

Post Details Ali Reza 2025-05-22 15:52:22 80 times
  • 0
  • 0
Post Contents

 

162477_Lede1

প্রফেসর ইউনূস এখন কী করবেন? তার সামনে বিকল্প খুবই কম। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তার নেতৃত্ব অনেকটাই চ্যালেঞ্জের মুখে । হয় তিনি পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেবেন, না হয় পদত্যাগ করে চলে যাবেন। সর্বশেষ খবর প্রফেসর ইউনূস ইতিমধ্যেই অভ্যুত্থানের নায়কদের ডেকে বলেছেন, তোমরা সংযত হও, নাহলে আমি পদত্যাগ করবো। সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান কয়েকটি মৌলিক বিষয়ে সরকারের সঙ্গে তার মতপার্থক্যের কথা জানিয়েছেন। সকল স্তরের সেনা-কর্মকর্তাদের তিনি বলেছেন, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হতে হবে। যেটা প্রফেসর ইউনূস কখনো স্পষ্ট করেননি। তার উপদেষ্টারা সবসময় পানি ঘোলা করেছেন। তিনি ডিসেম্বর থেকে জুনের কথা বলে নির্বাচনকে অনিশ্চিত করে তুলেছেন। বারবার দাবি তোলা সত্ত্বেও তিনি বিষয়টি খোলাসা করেননি।

সেনাপ্রধান জানুয়ারি, ২০২৬-এর মধ্যে নির্বাচিত সরকার দেখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। রাখাইনে মানবিক করিডোর নিয়ে জাতিকে অন্ধকারে রেখেছেন প্রফেসর ইউনূস। নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়ার পর বিভ্রান্তির বেড়াজালে ফেলেছেন জনগণকে। অদৃশ্য শক্তির সঙ্গে হাত মিলিয়ে জটিল এক পরিস্থিতি তৈরি করেছেন। জাতিসংঘ মহাসচিবকে এনে করিডোরের যথার্থতা প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন। যদিও তিনি স্পর্শকাতর এই বিষয়টি নিয়ে কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করেননি। রাজনৈতিক দলগুলো কড়া সমালোচনা করেছে। কেবলমাত্র জামায়াতে ইসলামী এক রহস্যজনক আচরণ করেছে। আখেরে সেনাপ্রধান বলে দিয়েছেন, এটা হবে জাতির জন্য আত্মঘাতী। সেনাবাহিনী করিডোর মানবে না। তার ভাষায়- কোনও করিডোর নয়।

যদিও প্রায় একই সময় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, তারা করিডোর নিয়ে আলোচনা করেননি এবং করবেন না। এটা ছিল এক হাস্যকর আওয়াজ। কারণ তিনি একাধিকবার বলেছেন, এ নিয়ে কে, কী বলল- তাতে যায় আসে না। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো সোচ্চার হয়েছে এ ব্যাপারে। এতদিন তারা প্রফেসর ইউনূসের পক্ষেই গান গাইছিল। ‘মবতন্ত্র’ নিয়েও সেনাপ্রধান কথা বলেছেন। ৫ই আগস্টের পর এটা ছিল মস্তবড় এক চ্যালেঞ্জ। দেশের আনাচে-কানাচে পর্যন্ত ‘মবতন্ত্রে’ স্বাভাবিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কাবু হয়ে পড়েছিল। মানুষ ছিল আতঙ্কিত। পুলিশের অনুপস্থিতিতে মবকারীরা আইনের শাসনকে তোয়াক্কা করেনি। সেনাপ্রধান এ প্রসঙ্গে বলেছেন, এখন থেকে এগুলো আর সহ্য করা হবে না। চট্টগ্রাম বন্দর নিয়েও তার খোলামেলা কথা। এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার মালিক জনগণ এবং নির্বাচিত সরকার। প্রফেসর ইউনূসের সরকার চট্টগ্রাম বন্দরকেও বিদেশিদের হাতে তুলে দেয়ার যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছিল। আরও বেশ কিছু বিষয়ে সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দূরত্ব বাড়ছিল। বিরক্ত ছিল সেনাবাহিনী। যার বিস্ফোরণ ঘটেছে বুধবার আলোচিত দরবারে। সেনাবাহিনীকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা হচ্ছিল। বিশেষ করে সরকারঘনিষ্ঠ এনসিপি কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছিল জেনারেল ওয়াকারকে। অথচ ওয়াকারের সহযোগিতা ছাড়া এই অভ্যুত্থান সম্পন্ন হতো কিনা তা নিয়ে অংক করার দরকার নেই। একবাক্যে সবাই বলবেন, সেনাবাহিনীর ভূমিকা ছিল এখানে মুখ্য। জেনারেল ওয়াকারের অভ্যুত্থানের পক্ষে থাকা ছিল মস্তবড় চ্যালেঞ্জ এবং ঝুঁকিপূর্ণ। একদিকে পতিত শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ আত্মীয়। অন্যদিকে তার নিজস্ব শিবিরেও ছিল বেশ কিছু বিষয়ে মতপার্থক্য। কিন্তু ওয়াকার পেছনে ফিরে তাকাননি। অভ্যুত্থানের পক্ষেই সায় দিয়েছেন। সমর্থন দিয়ে গেছেন এই সরকারের সব সিদ্ধান্তে। যদিও সরকারপ্রধান প্রফেসর ইউনূস অনেক বিষয়ে তার সঙ্গে আলোচনা করেননি।

এই পরিস্থিতিতে কোন দিকে মোড় নেবে বাংলাদেশের রাজনীতি? প্রফেসর ইউনূসই বা কী সিদ্ধান্ত নেবেন। বলাবলি হচ্ছে, হয় তিনি সবকিছু মেনে নিয়ে দায়িত্বে থাকবেন। নতুবা ছেড়ে দিয়ে তার আগের জীবনে ফিরে যাবেন। অতীত ইতিহাস বলে, তিনি হঠাৎ করেই কেবলা বদল করতে পারেন। এর আগেও তিনি এক দফা দল গঠন করে আবার নিজেই দলের বিলুপ্তি ঘোষণা দিয়ে রাজনীতির দৃশ্যপট থেকে বিদায় নিয়েছিলেন। তার পক্ষে যেকোনো সিদ্ধান্ত নেয়াই সম্ভব। তিনি যদি নির্বাচনের দিকে না হাঁটেন, তাহলে সমূহ বিপদ। কারণ বল এখন আর তার কোর্টে নেই। জেনারেল ওয়াকার জনগণের কাছে ঠেলে দিয়েছেন। তিনি গোড়া থেকেই বলে আসছিলেন, ১৮ মাসের মধ্যে নির্বাচন হতে হবে। কিন্তু প্রফেসর ইউনূসের ক্ষমতালোভী কিছু উপদেষ্টা এ নিয়ে নোংরা খেলা খেলেছেন। তাদের একমাত্র পুঁজি ছিল ছাত্র কিংবা নবগঠিত এনসিপি। একটি উগ্রবাদী গোষ্ঠীও সমর্থন দিয়ে যাচ্ছিল। প্রফেসর ইউনূসের উপদেষ্টাদের কেউ কেউ এমন মতও দিচ্ছিলেন, আওয়ামী লীগ গেছে, বিএনপিও যাবে। এটা কি সম্ভব? অনেকটাই আকাশ-কুসুম কল্পনা। কেন এই পরিস্থিতি তৈরি হলো। অর্থনীতি সংকটে। বিনিয়োগ নেই। মানুষ তার ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত। পুঁজি ভেঙে খাচ্ছে মানুষ। সংসারে হিসাব মেলাতে পারছে না। আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে। এতসবের মধ্যেও মানুষ পরিবর্তনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। কিন্তু ক্ষমতাসীনরা মানুষের মতামতকে তোয়াক্কা করেনি। মূল্য দেয়নি তাদের আত্মত্যাগকে। মানুষ খুঁজে বেড়াচ্ছে সরকারকে। কারণ কোথাও যে নেই সরকার। বিএনপির তরফেও যে প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়েছে তা খুবই স্পষ্ট। ডিসেম্বর সামনে রেখে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানিয়েছে দলটি। তারা এই সরকারের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখবে কিনা এ নিয়েও কড়া বার্তা দিয়েছে ।

যত সমালোচনাই হোক, প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস, জেনারেল ওয়াকার এই সময়ে যার যার অবস্থান থেকে দেশের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য এক ঐতিহাসিক ভূমিকা রেখেছেন। সেনাবাহিনী না থাকলে মাঠপরিস্থিতি অনেক আগেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেত। আবার আন্তর্জাতিক ইমেজ দিয়ে প্রফেসর ইউনূস লাইনচ্যুত ট্রেনকে লাইনে তুলেছেন। ক্ষমতার লিপ্সা আর উপদেষ্টাদের আত্মঘাতী কূটচাল দেশের পরিস্থিতিকে নাজুক করেছে। তারা দেশের নামও বদলানোর পরিকল্পনায় বিভোর ছিল। ভাবা যায় ! উপদেষ্টা পরিষদ বিতর্কিত হয়ে গেছে।

এনসিপি দাবি তুলেছে অন্তত তিনজন উপদেষ্টাকে এখনই পদত্যাগ করতে হবে। এর মধ্যে রয়েছেন ড. সালেহউদ্দিন, ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ ও ড. আসিফ নজরুল। তাদের ভাষায় এরা সবাই বিএনপির সমর্থক। অথচ অভ্যুত্থানে আসিফ নজরুলই ছিলেন সামনের কাতারের এক কৌশলযোদ্ধা।

বিএনপি বলছে, সরকারের ভেতরে এনসিপির যে দুজন উপদেষ্টা রয়েছেন তাদেরকেও পদত্যাগ করতে হবে। আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও মাহফুজ আলমকে নিরপেক্ষতার স্বার্থে পদত্যাগ করতে হবে। আরও তিনজন উপদেষ্টা আছেন তারা এখন মুখ লুকাচ্ছেন। এর মধ্যে একজন আছেন পারিবারিকভাবে বিএনপির সমর্থক। হালে তিনি রং বদলিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে কীভাবে একটি সরকার নির্বাচন পরিচালনা করবে। অস্বস্তি নিয়ে কি প্রফেসর ইউনূস দায়িত্ব পালন করতে পারবেন? রাজনীতির পণ্ডিতরা বলছেন, বুড়িগঙ্গায় অনেক পানি গড়িয়ে গেছে। ইউনূসকেই এখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তাকে যারা মসনদে বসিয়েছিলেন তারাই বা কী করবেন? এই প্রশ্নের হিসাব মেলাতে আরও ক'দিন সময় লাগবে।

যাইহোক, এখনো যদি অভ্যুত্থানের শক্তিগুলো ঐক্যবদ্ধ না হয়, নির্বাচনের দিকে না যায় তাহলে পরাজিত শক্তি আবারো দৃশ্যপটে হাজির হতে পারে। পাল্টে যেতে পারে পরিস্থিতি। সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত না নিলে এমনটাই হবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। অবস্থা এখন এমনই- হয় ভালোর দিকে যাবে, না হয় জাতিগত বিশৃঙ্খলার মধ্যে ডুবে যাবে। যা আমরা কেউই চাই না।

মানবজমিন

Comments

0 Comments

? Load More Comments
আরও পড়ুন

162595_YUnusmain সংকট ঘনীভূত, ইউনূসকে ঘিরে একটি চক্র অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর ক্রমেই দূরত্ব বাড়ছে। তবে এনসিপির সঙ্গে সম্পর্কের...

3-20250523094656 এনবিআরকে দুই ভাগ করছে না সরকার, আগের নিয়মে চলবে কাজ আপাতত এনবিআরকে দুই ভাগ করছে না সরকার। আন্দোলনরত কর্মকর্তাদের উদ্বেগ এবং অধ্যাদেশ বাস্তবায়নে দীর্ঘ প্রক্রিয়ার বিষয়টি...

15-20250523001242 নির্বাচনই সমাধান একটি সফল গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচার আওয়ামী সরকার পতনের পর প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা...

আরও
Sidebar Section সর্বশেষ

162595_YUnusmain সংকট ঘনীভূত, ইউনূসকে ঘিরে একটি চক্র

3-20250523094656 এনবিআরকে দুই ভাগ করছে না সরকার, আগের নিয়মে চলবে কাজ

15-20250523001242 নির্বাচনই সমাধান

prothomalo-bangla_2025-05-23_jvsxke6q_23052025-cm-2 সরকারের ওপর চাপ বাড়াল বিএনপি

57e973f8556e11a57358d70de2499355-682fef878683c জুলাইয়ের সকল লড়াকু শক্তিই ক্ষমতার প্রশ্নে অস্থির হয়ে গেছে: উমামা ফাতেমা

bd8471189ece66958fdff497a59acc22-682f9c8e2413c আন্দোলনে স্থবির অর্থনীতি

Shain-682fed7e85494 লন্ডনে সালমান এফ রহমানের ছেলে শায়ানের সম্পত্তি জব্দ

Dumki-6829af85ba793-683001febbb3b শহিদকন্যা ধর্ষণে অংশ নেয় ৩ কিশোর, মিলেছে পর্ণোগ্রাফি তৈরির প্রমাণ

160892_f1 অস্বস্তি, কোণঠাসা এনসিপি

image_190088_1747935295 অধ্যাপক ইউনূস ‘পদত্যাগের বিষয়ে ভাবছেন’ : নাহিদ ইসলাম

prothomalo-bangla_2025-05-14_7gnvrq2d_ISPR গণ–অভ্যুত্থানের পর সেনানিবাসে আশ্রয় নেওয়া ৬২৬ জনের তালিকা দিল সেনাবাহিনী

626fc584fcafdca703e9fed6a9b6242c-682f4383e1a97 প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করলেন নাহিদ ইসলাম

d776ee3f78582855f7f5da31ddce33c7-67acbbebee550 ‘নিন্দিত হয়ে বিদায় নিয়েন না’, প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশ্যে গয়েশ্বর

Gov-2opy-682f285c8525d নির্বাচন কমিশন নয়, উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠন জরুরি

01-1747922012 অধ্যাদেশে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা হবে: অর্থ মন্ত্রণালয়

162515_Untitled-30 সর্বদলীয় বৈঠক ডাকার আহ্বান জামায়াত আমীরের

c871e7df0a9a347f0720493a3d0875a3-682eb505003f9 বাংলাদেশে মানুষের মৌলিক স্বাধীনতাকে ঝুঁকিতে ফেলেছে অন্তর্বর্তী সরকার

0152525-1747737311 ইশরাককে মেয়র ঘোষণা নিয়ে রিট খারিজের খবরে বিএনপির নেতা-কর্মীদের আনন্দ-উচ্ছ্বাস-মিছিল

prothomalo-bangla_2023-11_ceda57b6-be0b-4e41-9926-3e6f2d9fe8d2_Asean ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে ইসির গেজেটের কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে করা রিট খারিজ

8522-682ea08c1c6bd ইশরাকের শপথ ইস্যুতে রিটের আদেশ আজ, সুপ্রিম কোর্টে নিরাপত্তা জোরদার

আরও
© kalerdak.com, 2023-2005