
গাজা উপত্যকার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার লক্ষ্যে সেখানে অভিযান জোরদার করেছে ইসরায়েল। দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ওই অভিযানের জেরে যুক্তরাষ্ট্রসহ ঘনিষ্ঠ মিত্ররা ইসরায়েলের ওপর থেকে তাদের সমর্থন প্রত্যাহার করে নেওয়ার হুমকি দিচ্ছে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজায় যুদ্ধ শেষ করতে ব্যর্থ হলে ইসরায়েলের প্রতি মার্কিন সমর্থন প্রত্যাহারের হুমকি দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। এই সতর্কবার্তা ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকারকে দেওয়া হয়েছে।
আলোচনার বিষয়ে জানেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এমন একটি সূত্রের বরাত দিয়ে ওয়াশিংটন পোস্ট বলেছে, ট্রাম্পের প্রতিনিধিরা ইসরায়েলকে জানিয়েছেন, যদি তারা গাজা যুদ্ধ শেষ না করে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র দেশটিকে পরিত্যাগ করবে।
ওই সূত্র বলেছে, ট্রাম্পের লোকজন ইসরায়েলকে জানিয়ে দিয়েছে, ‘যদি আপনারা এই যুদ্ধ শেষ না করেন, তাহলে আমরা আপনাদের পাশে থাকব না।’ হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব ক্যারোলিন লেভিটও বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও গাজা যুদ্ধের অবসান চান।’ গত সপ্তাহে ইসরায়েলি বংশোদ্ভূত মার্কিন সেনা এডান আলেকজান্ডারকে মুক্তি দেওয়ার পর এ কথা বলেছিলেন প্রেস সচিব লেভিট।
পূর্বপরিকল্পনা ছাড়াই হঠাৎ করে এডান আলেকজান্ডারকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র-হামাস সরাসরি আলোচনার মাধ্যমে এডানের মুক্তি নিশ্চিত করা হয়েছে। ওই আলোচনায় ইসরায়েলকে রাখা হয়নি। গত সপ্তাহে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্য সফরে গিয়েছিলেন। এবারের সফরে তিনি সৌদি আরব, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ আরব দেশগুলোর নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। মধ্যপ্রাচ্য সফরের সময় ট্রাম্প বলেছেন, গাজায় বহু মানুষ অনাহারে রয়েছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, ‘লোকজন অনাহারে ধুঁকছে। সেখানে ভয়ংকর সব ঘটনা ঘটছে।’
অন্য মিত্রদের থেকেও চাপ বাড়ছে
গাজায় নতুন করে শুরু করা সামরিক অভিযান বন্ধ না করলে এবং ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে ত্রাণ প্রবেশে বাধা সরিয়ে না নিলে ইসরায়েলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দিয়েছে যুক্তরাজ্য, কানাডা ও ফ্রান্স। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর প্রকাশ করেছে।
গতকাল সোমবার ব্রিটিশ সরকারের পক্ষ থেকে এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইসরায়েল সরকার (গাজার) বেসামরিক জনগণের জন্য অত্যাবশ্যক মানবিক সহায়তা দিতে অস্বীকার করছে, এটি অগ্রহণযোগ্য এবং এতে আন্তর্জাতিক মানবিক আইন লঙ্ঘনের ঝুঁকি রয়েছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘আমরা পশ্চিম তীরে (ইহুদি) বসতি সম্প্রসারণের যেকোনো প্রচেষ্টারও বিরোধিতা করছি... প্রয়োজনে আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে পিছপা হব না, যার মধ্যে নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা সত্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপও অন্তর্ভুক্ত।’
নেতানিয়াহু কী বলেছেন
যুক্তরাজ্য, কানাডা ও ফ্রান্সের নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকির জবাবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘লন্ডন, অটোয়া ও প্যারিসের নেতারা ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ওপর চালানো হামলার জন্য বিশাল পুরস্কারের প্রস্তাব দিচ্ছেন। এর মাধ্যমে তাঁরা ভবিষ্যতে এমন আরও নৃশংসতাকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন।’
নেতানিয়াহু আরও বলেন, ইসরায়েল ন্যায়সংগত উপায়ে আত্মরক্ষা করবে, যতক্ষণ না পূর্ণ বিজয় অর্জিত হয়। তিনি যুদ্ধ শেষ করার জন্য ইসরায়েলের শর্তগুলোর কথা পুনরায় উল্লেখ করেন, যার মধ্যে বাকি জিম্মিদের মুক্তি এবং গাজা উপত্যকার নিরস্ত্রীকরণের দাবি রয়েছে।
হামাসকে চাপে ফেলে বাকি জিম্মিদের মুক্ত করার কৌশল হিসেবে মার্চের শুরু থেকে ইসরায়েল গাজায় চিকিৎসা, খাদ্য, জ্বালানিসহ সব ধরনের ত্রাণ প্রবেশ বন্ধ করে দেয়।
ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদন নিয়ে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম কী বলছে
ইসরায়েল গাজা যুদ্ধ শেষ না করলে যুক্তরাষ্ট্রের দেশটিকে পরিত্যাগ করার হুঁশিয়ারি নিয়ে ওয়াশিংটন পোস্ট যে প্রতিবেদন করেছে, তার পাল্টা প্রতিবেদন করেছে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম। একজন মার্কিন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে টাইমস অব ইসরায়েলের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের মধ্যে মতপার্থক্য থাকতে পারে, তবে ‘আমরা ইসরায়েলকে ত্যাগ করব’, এই ধারণা একেবারেই অমূলক।