কালের ডাক

Main Section Content Ticker Breaking Content Section Post Title

ইসলামী ব্যাংকের সঞ্চিতি ঘাটতি বেড়ে ৭০ হাজার কোটি টাকা

Post Details Ali Reza 2025-05-08 03:49:10 19 times
  • 0
  • 0
Post Contents

 

untitled-9-1746664767

ইসলামী ব্যাংকে ঋণের বিপরীতে প্রভিশন বা নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণে বড় অঙ্কের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। এই ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৬৯ হাজার ৮১৬ কোটি টাকা। প্রভিশন সংরক্ষণের জন্য ব্যাংকটি ২০ বছর সময় চেয়ে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন করেছে। অর্থাৎ আগামী ২০ বছরে ধাপে ধাপে তারা ঘাটতি পূরণ করতে চায়। দেশের ইতিহাসে কোনো ব্যাংক এত বড় অঙ্কের প্রভিশন ঘাটতিতে পড়েনি। ইসলামী ব্যাংক নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০২৪ সালের পরিদর্শন প্রতিবেদনে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ইসলামী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়ে গত ডিসেম্বর শেষে দাঁড়িয়েছে ৬৮ হাজার কোটি টাকা, যা তাদের মোট ঋণের ৪২ শতাংশ। পরিদর্শনের আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে পাঠানো তথ্যে ইসলামী ব্যাংক খেলাপি ঋণ দেখিয়েছিল এর অর্ধেকেরও কম। খেলাপি ঋণের প্রকৃত অঙ্ক বের হয়ে আসায় নিয়ম অনুযায়ী প্রভিশন সংরক্ষণের অঙ্কও বেড়ে গেছে। প্রতিবেদনে দেখা যায়, ব্যাংকটির শুধু চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ শাখার প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৪১ হাজার ৯৩৭ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান সমকালকে বলেন, পরিদর্শনে ইসলামী ব্যাংকের বিগত কয়েক বছরের পুঞ্জীভূত অনিয়মের তথ্য বেরিয়ে এসেছে। এতে ব্যাংকটির বিপুল পরিমাণের খেলাপি ঋণ উদ্ঘাটিত হয়েছে। এসব ঋণের বিপরীতে প্রভিশন সংরক্ষণের জন্য ব্যাংকটি সময় চেয়ে আবেদন করেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসলামী ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, দেশের আমদানি-রপ্তানিসহ বৈদেশিক বাণিজ্যের উল্লেখযোগ্য অংশ হয় ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে। প্রবাসী আয়ের প্রায় এক-চতুর্থাংশ আসে এ ব্যাংকের মাধ্যমে। প্রভিশন বা মূলধন ঘাটতি থাকলে ঋণপত্র বা এলসি খোলার কনফারমেশন চার্জ বেড়ে যায়। অনেক সময় বিদেশি ব্যাংক সরাসরি ওই ব্যাংকের এলসি নিতে চায় না। তখন তৃতীয় একটি ব্যাংকের গ্যারান্টি নিয়ে এলসি খুলতে হয়। এসব বিবেচনায় প্রভিশন সংরক্ষণে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে সময় চাওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৩৬টির মধ্যে ২০টি ব্যাংকই প্রভিশন সংরক্ষণে সময়সহ বিভিন্ন সুবিধা চেয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আবেদন করেছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক এখনও কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি। ইসলামীসহ এসব ব্যাংকের বিষয়ে একবারে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।

আমানতের সুরক্ষা দিতে সব ঋণের শ্রেণিমান বিবেচনায় ব্যাংকগুলোর মুনাফা থেকে নির্ধারিত হারে নিরাপত্তা সঞ্চিতি বা প্রভিশন রাখতে হয়। বর্তমানে নিয়মিত ঋণের প্রভিশন রাখতে হয় ১ শতাংশ। তিন মাস পর্যন্ত বকেয়া তথা স্পেশাল মেনশন অ্যাকাউন্ট হিসেবে শ্রেণীকৃত ঋণের বিপরীতে ৫ শতাংশ রাখতে হয়। তিন থেকে ছয় মাস পর্যন্ত মেয়াদোত্তীর্ণ বা সাব-স্ট্যান্ডার্ড ঋণে ২০ শতাংশ এবং ৬ থেকে ১২ মাস পর্যন্ত মেয়াদোত্তীর্ণ হলে ডাউটফুল বা সন্দেহজনক মানে শ্রেণীকরণের বিপরীতে ঋণের ৫০ শতাংশ প্রভিশন রাখতে হয়। আর এক বছর বেশি মেয়াদোত্তীর্ণ মন্দ ঋণে প্রভিশন রাখতে হবে শতভাগ। ব্যাংকগুলোর অর্জিত মুনাফা বা উদ্যোক্তাদের জোগান দেওয়া মূলধন থেকে এ প্রভিশন রাখার নিয়ম। প্রভিশন ঘাটতি বেড়ে যাওয়ার মানে আমানতকারীদের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়া এবং ব্যাংকের আর্থিক ভিত্তি দুর্বল হওয়া।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ইসলামী ব্যাংক ডিসেম্বরভিত্তিক যে তথ্য জমা দিয়েছিল, সেখানে খেলাপি ঋণ দেখানো হয় ৩২ হাজার ৮১৭ কোটি টাকা। এটি বিতরণ করা ১ লাখ ৫৫ হাজার ৬৫৯ কোটি টাকা ঋণের ২১ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শনে নতুন করে আরও ৩২ হাজার ৮৯৯ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ উদ্ঘাটিত হয়। ব্যাংকটির প্রকৃত খেলাপি ঋণ ঠেকেছে ৬৫ হাজার ৭১৬ কোটি টাকা। এটি মোট ঋণের ৪২ দশমিক ২২ শতাংশ।

খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি দীর্ঘদিনের ‘নন-ফান্ডেড’ দায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শনে ‘ফান্ডেড’ করা হয়েছে। যে কারণে এখন সঞ্চিতি সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা অনেক বেড়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চূড়ান্ত হিসাব অনুযায়ী, ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকটিকে ৭৭ হাজার ৫৩৩ কোটি টাকার প্রভিশন রাখতে হবে। ব্যাংক সংরক্ষণ করেছে মাত্র ৭ হাজার ৭১৭ কোটি টাকা। এতে ঘাটতি দেখা দিয়েছে ৬৯ হাজার ৮১৬ কোটি টাকা। এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকে দেওয়া তথ্যে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রভিশন সংরক্ষণের প্রয়োজনীতা দেখানো হয়েছিল ২০ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা। আর সংরক্ষণের পরিমাণ দেখানো হয় ৭ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা। তখন ১৩ হাজার ১৫৩ কোটি টাকা ঘাটতি দেখানো হয়।

প্রভিশনের আগের হিসাব ধরে ইসলামী ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি দেখানো হয় ১২ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা। প্রভিশন ঘাটতি বেড়ে যাওয়ায় মূলধন ঘাটতি ৭০ হাজার কোটি টাকায় ঠেকবে। ব্যাংকটির আবেদন অনুযায়ী প্রভিশন সংরক্ষণে ২০ বছর সময় দিলে এখনই আর মূলধন ঘাটতি দেখাতে হবে না। প্রভিশনে ডেফারেল পেলে প্রকৃত অবস্থা যা-ই থাকুক, ব্যাংকটির আর্থিক অবস্থা তখন কাগজ-কলমে তুলনামূলক ভালো দেখা যাবে।

প্রতিটি ব্যাংকের ডিসেম্বরভিত্তিক বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন পরবর্তী বছরের এপ্রিল মাসের মধ্যে চূড়ান্ত করার আইনি বাধ্যবাধকতা আছে। প্রথমে ব্যাংক প্রতিবেদন তৈরি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে দেয়। এর পর বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন বিভাগ এবং বহির্নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অডিট করা হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শনের সময় ব্যাংকের ঋণের গুণগত মান, প্রয়োজনীয় প্রভিশন, মূলধন পর্যাপ্ততা এবং মুনাফা বা লোকসানসহ বিভিন্ন সূচকের সঠিকতা দেখা হয়। ব্যাংকিং পরিভাষায় যা ‘কুইক সামারি’ প্রতিবেদন হিসেবে বিবেচিত।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন বিভাগের এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, কোনো ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বাড়লে স্বাভাবিকভাবে অন্য সব সূচক খারাপ হয়। গত সরকারের সময়ে বিভিন্ন নীতি সহায়তার মাধ্যমে খেলাপি ঋণের আসল চিত্র আড়াল করা হতো। আবার পরিদর্শনের সময়ও শিথিলতা দেখানো হতো। এখন কোনো শিথিলতা দেখাচ্ছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বরং খেলাপি ঋণ ছাড়াও অন্য ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে ধার দেওয়া অনাদায়ী অর্থ, আদালতের স্থগিতাদেশ নিয়ে নিয়মিত রাখা ঋণেও প্রভিশন রাখতে বলা হয়েছে। এসব কারণে ব্যাংকগুলোর আসল চিত্র বেরিয়ে এসেছে।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ ও ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওমর ফারুকের সঙ্গে গত সোমবার থেকে চেষ্টা করেও কথা বলা যায়নি। দু’জনকে সুনির্দিষ্ট বিষয় জানিয়ে খুদে বার্তা পাঠালেও তারা কোনো জবাব দেননি। ওমর ফারুকের সাক্ষাৎ চাইলে মঙ্গলবার তিনি টেলিফোনে সমকালকে বলেন, ‘আমি আপনাকে পরে ফোন করছি।’ এর পর কয়েক দফা ফোন এবং সুনির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ করে হোয়াটসঅ্যাপে খুদে বার্তা দেওয়া হয়। তিনি কোনো জবাব দেননি।

খাতুনগঞ্জ শাখায় ৪২ হাজার কোটি টাকা প্রভিশন ঘাটতি বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খাতুনগঞ্জ শাখার ফান্ডেড ও নন-ফান্ডেড ঋণের বিপরীতে ৪৩ হাজার ১৭৩ কোটি টাকার প্রভিশন রাখতে হবে। যেখানে সংরক্ষণ করা হয়েছে মাত্র এক হাজার ২৩৬ কোটি টাকা। ঘাটতি হয়েছে ৪১ হাজার ৯৩৭ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ইসলামী ব্যাংকের চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ করপোরেট শাখার আমানত রয়েছে মাত্র ৩ হাজার ৯২১ কোটি টাকা। এর বিপরীতে শাখাটির মাধ্যমে দায় সৃষ্টি হয়েছে ৫৩ হাজার ৫০১ কোটি টাকা।

Comments

0 Comments

? Load More Comments
আরও পড়ুন

161237_Abul-1 একাত্তরে ভারতের ভূমিকার প্রতিশোধ নিয়েছে পাকিস্তান: শেহবাজ কাশ্মীর, পানিবন্টন সহ সব বিরোধপূর্ণ ইস্যুতে বৃহত্তর আলোচনার জন্য ভারতের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ...

587-682557b661438 ভারতে ধ্বংস করা হলো মুসলমানদের ২৮০টি ধর্মীয় স্থাপনা ভারতের উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের সাত জেলায় অভিযান চালিয়ে মুলসমানদের ২৮০টি ধর্মীয় স্থাপনা ধ্বংস করা হয়েছে। রাজ্য প্রশাসন...

jaghannat-university-1747284075 রাতভর কাকরাইলে অবস্থানের পর সকালেও জবি শিক্ষার্থীদের আন্দোলন আবাসন, বৃত্তি, প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ বাজেট অনুমোদনসহ তিন দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার...

আরও
Sidebar Section সর্বশেষ

161237_Abul-1 একাত্তরে ভারতের ভূমিকার প্রতিশোধ নিয়েছে পাকিস্তান: শেহবাজ

587-682557b661438 ভারতে ধ্বংস করা হলো মুসলমানদের ২৮০টি ধর্মীয় স্থাপনা

jaghannat-university-1747284075 রাতভর কাকরাইলে অবস্থানের পর সকালেও জবি শিক্ষার্থীদের আন্দোলন

untitled-53-1747271727 শেখ মুজিবসহ ৪ শতাধিক নেতার মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি বাতিল হচ্ছে না

7b286548a2130a9f278ececa988471f2-68256a1069233 ছাত্রীর সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় ধরা রাবি শিক্ষক, ভিডিও ভাইরাল

image-187185-1747101451 জামায়াতের দাঁড়িপাল্লার কী হবে

pic-(22)-68227b5019bd0 স্বাভাবিক পদায়নে ফ্যাসিবাদ আমলের বেশির ভাগ ওসি

prothomalo-bangla_2025-05-12_o4n0mwc8_SATKHIRADH05502025051278-SYM-PS12-05-2025-4 অনতিবিলম্বে সীমান্তে ‘পুশ ইন’ বন্ধ চায় ঢাকা, দিল্লিকে চিঠি

dfbb70cc76d2376cad2e6a16554079ec-6816ec3c59930 যুদ্ধবিরতির পর ভারত ও পাকিস্তান যে দাবি করছে

160899_images (6) শিল্পী মমতাজ গ্রেপ্তার

160892_f1 নয়া বিতর্কে এনসিপিতেই চাপান-উতোর

1926_pm2 ১৫০০ মানুষ হত্যার নির্দেশদাতা শেখ হাসিনা

160891_f2 আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত

509c756a76eabad9fa57591d593a67af-68225cd712e95 এনবিআর বিলুপ্ত, রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাদেশ জারি

image-186568-1746893244-20250510231955 যুদ্ধবিরতি শুরুর এক ঘন্টার মধ্যেই ফের হামলার দাবি

1000208800-20250510184908 কত দাম এস-৪০০-এর? কত ক্ষতি হলো ভারতের?

d7937d112b36d2e2eac3e171592a92b8-681f4d7b53461 যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিল ভারত ও পাকিস্তান

Untitled-1-681f8828777a5 ‘কেবল জনগণের সরকারই পারবে প্রশাসনে ঘাপটি মেরে থাকা দোসরদের বিচারের আওতায় আনতে’

BAL-pic-681f85d7878d5 নিষিদ্ধ হলো ফ্যাসিবাদী দল আওয়ামী লীগ

7ea508669723697a9f5562276384242c পাঁচ সচিবকে অবাঞ্চিত ঘোষণা, পদত্যাগ না করলে অফিস ঘেরাও করে বাধ্য করা হবে

আরও
© kalerdak.com, 2023-2005